সাপ্তাহিক নফল নামাজ, বা ৭ দিনে ও রাতের নফল নামাজ

পাঁচ ওয়াক্ত বা নফল ইবাদাতের পাশাপাশি আরও অনেক ইবাদাত আছে তার মধ্যে একটি হলো সাপ্তাহিক নামাজ বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি প্রতিদিন ও রাতে বিশেষ কিছু নফল নামজ রয়েছে উহার ফজিলতও অপরিসীম। আসুন জেনে নেই সাপ্তাহিক নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত।
সাপ্তাহিক নফল নামাজ, বা ৭ দিনে ও রাতের নফল নামাজ

শুক্রবার দিবাগত রাতের নামাজ

 এ রাতে মাগির বয়সের নামাজের মধ্যবর্তী সময় ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। এ নামাজ যে কোন সূরা দিয়ে পড়া যা। যে এ নামাজ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি অট্টালিকা প্রস্তুত করবেন এবং সে যেন সমগ্র মুসলিম নর নারীর সদকা দিল এবং আল্লাহ তাকে মার্জনা করে দেবেন হযরত আনাজ ইবনে মালেক এ নামাজের বর্ণনা করেছেন।

শনিবার দিনের নামাজ

এদিনে যেকোনো সময় চার রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। এক সালামে প্রত্যেকে রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে তিনবার সূরা কাফিরুন পড়বে । নামাজ আনতে আয়াতুল কুরসি একবার পড়লে সে এক বছর রোজা রাখার সোয়াব এক বছর রাতে ইবাদতের ও শহীদের সওয়াব পাবে। প্রত্যেক হরফের বদলে এক হজ ওমরার সওয়াব পাবে এবং আরশের ছায়া নবী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। হযরত সাঈদ রাঃ হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে নামাজ বর্ণনা করেছেন।

চার রাকাত নফল নামাজের নিয়ত


নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা আরবা আরাকাতি ছলাতিন নাফ্লি মুতাওয়াজ্জি হান ইলা- জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবর।

শনিবার রাতের নামাজ


এ রাতে যখন সময় ২০ রাকাত নফল নামাজ ৫০ বার সূরা ফালাক ও নাস একবার পড়ে নামাজ আনতে নিজের ও বাবা মার জন্য ইস্তেগফার ১০০ বার দুরুদ শরীফ ১০০ বার তারপর ১০০ বার

আরবি উচ্চারণ

لا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم

বাংলা উচ্চারণ

 লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি আলিউল আজিম

অর্থ 

সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত বাঁচার এবং সৎ কাজ করার ক্ষমতা কারো নেই তারপর একবার পড়বে>>

"আশাহাদু আলা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশাহাদু আন্না আ-দামা ছফওয়াতুল্লা-হি ওয়া ফিতরাতুহূ ওয়া ইবরা-হীমু খালীলুল্লা-হু আযযা ওয়া মূসা- কালীমুল্লা-হি তায়ালা ওয়া ঈ-সা-রূহুল্লা-হি সুবাহা-নাহূ ওয়া মুহাম্মাদুন হাবীবুল্লা-হি আযযা ওয়া জ্বাল্লা।"

অর্থ 

আমি দ্বীনদারীনভাবে খালেছ মনে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে হযরত আদম আলাই সাল্লাম আল্লাহর খাঁটি বন্ধু এবং বিশেষ সৃষ্টি হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম মহান আল্লাহতালার বন্ধু মূসা আঃ আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথনকারী এবং হযরত ঈসালে সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার রুহ এবং সাইয়েদিনা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আল্লাহ তায়ালার পরম বন্ধু।


এর নামাজ আদায় করলে কাফের ও মুসলমানের সংখ্যা সমান সওয়াব হবে এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নামাজিকে মাহফুজ লোকেদের সাথে উঠাবেন। নবীদের সাথে জান্নাতে দাখিল করবেন। এই নামাজ হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেছেন।

রবিবার দিনের নামাজ

এ দিনে যে কোন সময় এক সালামে চার রাকাত নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা বাকারার ২ আয়াত পড়বে নামাজ পড়লেন নাছারা নর-নারীর সংখ্যা সমান নেকি লেখা হবে এবং নবীর সওয়াব পাবে হজ্জ ওমরার সওয়াব পাবে।  প্রতি রাকাতের বদলে ১০০০ নামাজের সওয়াব পাবে এবং জান্নাতের প্রত্যেক হরফের বদলে মিশকের শহর পাবে এ নামাজ হজরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

রবিবার রাতের নামাজ

এ রাতে যে কোন সময় এক সালামের চার রাকাত নফল নামাজ। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাস ১০ বার দ্বিতীয় রাকাতে 20 বার তৃতীয় রাকাত ৩০ বার এবং চতুর্থ রাকাতে ৪০ বার পড়া শেষ করতে হয়।  সালামের পর সূরা ইখলাস ৫০ বার ইস্তেগফার নিজের বাবা-মার জন্য ৫০ বার এবং দুরুদ শরীফ ৫০ বার পড়লে। আল্লাহতালা সুউদ্দেশ্য পূর্ণ হয় হযরত আমস রাঃ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা এ নামাজ বর্ণনা করেছেন। 




এ রাতে যে কোন সময় আরো দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। সূরা ইখলাস প্রথম রাকাতে 15 বার এবং দ্বিতীয় রাকাতে ১৫ বার পরে শেষ করতে হয় সালামের পর আয়াতুল কুরসি ১৫ বার এবং ইস্তেগফার ১৫ বার পড়বে। কে নামাজ আদায় করে বেহেশতবাসী হবে যদিও সে দোযখী হয় আল্লাহতালা তার সব জাহেরী গুনাহ মাফ করে দেবেন। প্রত্যেক আয়াতের পরিবর্তে সওয়াব নসিব হবে। আগামী সোমবারের ভেতর মারা গেলে শহীদ হবে হযরত আবু উমাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা কর্তিক বর্ণিত।

সোমবার দিনের নামাজ

এ দিনের যে কোন সময় ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রত্যেক রাতে সূরা ফাতিহার পরে আয়াতুল কুরসি একবার পড়বে। নামাজ আনতে 12 বার সূরা ইখলাস বা বারবার ইস্তেগফার পড়বে। যে এ  নামাজ আদায় করবে কেয়ামতের দিন তাকে ডাকা হবে অমুকের ছেলে ওমুক কোথায়?  আল্লাহ তায়ালা তার সওয়াব নিতে আসা দরকার। সে যখন আল্লাহতালার কাছে যাবে তখন তাকে এক হাজার বেহেশতী জেওর ও তাজ পড়ানো হবে এবং এক লক্ষ ফেরেস্তা তাকে নিয়ে যাবে ফেরেশতাদের সঙ্গে অসংখ্য উপহার থাকবে হযরত সাবেতুল বেনানি তায়ালা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হতে নামাজ বর্ণনা করেছেন।

সোমবার রাতের নামাজ

এ রাতে যে কোন সময় ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রতি রাকাতে সূরা নাসর পাঁচবার করে আল্লাহতালা নামাজের জন্য বেহেশতে সাত পৃথিবীর সমান বিরাট বাড়ি তৈরি করবেন। নামাজ সম্বন্ধে হাদিস শরীফে বর্ণনা রয়েছে।



মঙ্গলবার দিনের নামাজ

এ দিন সূর্য হেলার সঙ্গে সঙ্গে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রতি রাকাতে আয়াতুল কুরসি একবার এবং সূরা ইখলাস তিনবার পড়ে নামাজ শেষ করলে ৭০ দিন যাবত তার কোন গুনা লেখা হবে না । যদি সে ওই দিনের মধ্যে মারা যায় তবে শহীদ হবে এবং ৭০ বছরের গুনাহ মাফ হবে।  ইয়াজিদ রুপাই নি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা থেকে বর্ণনা করেছেন।


মঙ্গলবার রাতের নামাজ

এ রাতে যে কোন সময় দুই রাকাত নফল নামাজ প্রথম রাকাতে সূরা ফালাক দশবার এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা নাসবার পরে আদায় করলে 70 হাজার ফেরেশতা আসমান হতে নাযিল হয়। নামাজির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত সব লিখতে থাকবে। এ নামাজ সম্বন্ধে আদেশ শরীফে বর্ণনা রয়েছে ।

বুধবার দিনের নামাজ

এ দিন ইসরাকের পর ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রত্যেক রাকাতে একবার আয়াতুল কুরসী তিনবার সূরা এখলাস সূরা নাস পড়তে হয়। এই নামাজ আদায় করলে আরশের নিকট হতে ফেরেশতারা নামাজকে ডেকে বলে হে আল্লাহর বান্দা নতুন ভাবে আমল আরম্ভ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহতালা তোমাকে মাফ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তার কবরের আজাব কবরের সংকীর্ণতা ও অন্ধকার দূর করে দেবেন এবং তার আমল নবীদের আমলের মত উঠানো হবে ও কিয়ামতের কষ্ট দূর হবে । হযরত আবু ইদ্রিস খাওলানি রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হযরত মাস ইবনে যাবার রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হতে বর্ণনা করেছেন।

বৃহস্পতিবার দিনের নামাজ

এ দিনের জোয়ার আসরের মাঝামাঝি সময় দুই রাকাত নফল নামাজের প্রথম রাকাতে 21 বার আয়াতুল কুরসি এবং দ্বিতীয় রাকাতে ২১ বার সূরা ইখলাছ পারেন আমার শেষ করবে। সালাম ফিরানোর পর দুরুদ শরীফ ১০০ বার পড়বে যে ব্যক্তি নামাজ পড়বে আল্লাহতালা তাকে রজব , শাবান এবং রমজান মাসের রোজাদার হজ্জ আদায়কারী এবং মুমিনের সংখ্যা অনুপাত সব দিবে। হযরত আকরামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা হযরত ইবনে আব্বাস এ নামাজ বর্ণনা করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাতের নামাজ

এ রাতে মাগরিব ও এশার মাঝে মাঝে সময় ভালো রাকাত নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাস ১০ বার করে নামাজ পড়লে ১২ বছরের দিনের রোজা ও রাতের ইবাদতের সময় পাবে। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ ফাতেহা নামাজ বর্ণিত হয়েছে।

শুক্রবার দিনের নামাজ

এ দিনে জোহরের মাঝামাঝি সময় দুই রাকাত নফল নামাজের প্রথম রাকাতে আয়াতুল কুরসি একবার সূরা ফালাক এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস একবার সূরা ফালাক 20 বার পড়বে । সালামের পর ৫০ বার 
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ আলী উল আজিম পড়বে

এই নামাজ পড়লে জান্নাতে নিজের স্থান না দেখে মরবে না। হযরত মুজাহিদ রাঃ হযরত ইবনে আব্বাস থেকে এই নামাজের বর্ণনা করেছেন। 

এ দিনে দুপুরে আরও ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। প্রথম দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে একবার সূরা ফালাক এবং দ্বিতীয় রাকাতে একবার সূরা নাস পড়বে প্রথম দুই রাকাতের সালামের পর আয়াতুল কুরসী সাতবার পড়বে। তারপর দুই সালামে বাকি ৮ রাকাত নামাজ আদায় করবে আট রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে একবার সূরা নছর এবং ২৫ বার সূরা ইখলাস পড়বে ।


নামাজের দোয়াটি ৭০ বার পড়বে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি আলিউল আজিম

এ নামাজ পড়লে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করে ওই ব্যক্তিকে জান্নাতে নিবেন তার ও তার পিতা-মাতার গুনাহ মাফ হবে আগেও পিছনের গুনাহ মাফ হবে এবং নতুনভাবে আমল করার জন্য তাকে বলা হবে কেন আমার সম্বন্ধে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

শেষ মন্তব্য

আসসালামু আলাইকুম আমাদের সাপ্তাহিক নফল নামাজ, বা ৭ দিনে ও রাতের নফল নামাজ  সম্পকিত পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটা আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন.। তারাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে ও উপকৃত হতে পারে। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন nafizit.com এ ওয়েবসাইটে এখানে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল লেখা আছে যা পড়ে আপনার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন।এবং আপনাদের জ্ঞান-বিধিতে সাহায্য করবে। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন এ থেকে আমরা সেই ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url