কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
কিডনি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। মানুষ যেসব প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। শতকরা ৫০ভাগ ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। এই রোগটি নীরব ঘাতক হয়ে শরীরের ক্ষতি করে।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ভূমিকা
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি, যা সম্পর্কে অনেকেই জানি না। মানুষের দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না। কিডনি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আজকে আলোচনা করবো , আলোচনার বিষয় কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ।
কিডনি সম্পর্কিত তথ্য
মানুষের দুটি কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে শরীরকে সুস্থ রাখে। দুটি কিডনিতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ছাঁকনি রয়েছে, যা অনবরত রক্তকে পরিশোধন করে যাচ্ছে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং অস্থিগুলোকে শক্তিশালী করে। শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য একটি কিডনিই যথেষ্ট।
কিডনি সমস্যার কারণ
কিডনি সমস্যার কারণ গুলো নিচে দেওয়া হল ঃ -
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা প্রাত্যহিক সমস্যাগুলোর একটা। বিশেষত পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের অভাবে শহরাঞ্চলের নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। দীর্ঘক্ষণ মূত্রাশয় পূর্ণ করে রাখা শরীরে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। পেশির ওপর চাপ থেকে ডাইভারটিকিউলোসিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করা থেকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বা কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয় ।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ক্যাফেইনে বেশি আসক্তি
তৃষ্ণা পেলে আমরা অনেক সময় পানি পান না করে নানা ধরনের কোমল পানীয় পান করি। কিন্তু এসব পানীয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন মেশানো থাকে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির ওপরও চাপ প্রয়োগ করে এবং এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
প্রতিদিন যেসব কারণে কিডনির ক্ষতি হয় তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হলো পর্যাপ্ত পানি পান না করা। কিডনির অন্যতম প্রধান কাজ শরীর থেকে পরিপাক প্রক্রিয়ার বর্জ্য অপসারণ করা এবং লোহিত রক্তকণিকার ভারসাম্য রক্ষা করা।এর ফলে রক্তে দূষিত রাসায়নিক জমা হতে থাকে।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বেশি লবণ খাওয়া
বিভিন্ন খাবার-দাবারে মিশে থাকা লবণকে পরিপাক করা কিডনির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রান্না করা বা প্যাকেটজাত খাবারে ব্যবহার করা লবণ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের বড় উৎস। কিন্তু পরিপাকের মধ্য দিয়ে এই সোডিয়ামের বেশির ভাগটাই বর্জ্য হিসেবে শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। আমরা যখন বেশি বেশি লবণ খাই, তখন এই সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে কিডনিকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে কিডনির ওপর প্রবল চাপ পড়ে।
ব্যথানাশকের প্রতি নির্ভরশীলতা
মাথাব্যথা, গলাব্যথা যা-ই হোক না কেন কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার বাজে অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু প্রায় সব ব্যথানাশক ওষুধেরই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কিডনিসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য এসব ওষুধ ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধের ওপর নির্ভরতা রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ধূমপানে আসক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের অভিমত অনুসারে ধূমপান কিডনিসহ শরীরে সব অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতেই ধূমপানের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে। সুস্থ কিডনি চাইলে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন
রাত জেগে থাকা
রাত জেগে থাকা, ঘুমাতে না পারা আমাদের অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা। কিন্তু ঘুম শরীরের জন্য নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময়ই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর টিস্যুর নবায়ন ঘটে। ফলে ঘুমাতে না পারার সমস্যাটা নিয়মিত চলতে থাকলে কিডনিসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর এই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে যায়।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
কিডনি সমস্যার লক্ষন
কিডনি রোগ হলো নিরব ঘাতক। ৫০ ভাগ অকেজো হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এরপর যেসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়-গোড়ালি, পা বা পা ফুলে যাওয়া: আপনি এমন সাইটগুলিতে এডিমা লক্ষ্য করতে শুরু করবেন যা প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে। কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- পেরিওরবিটাল এডিম
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- ভোরবেলা বমি বমি ভাব এবং বমি
- রক্তশূন্যতা
- ফেনাযুক্ত প্রস্রাব বা প্রস্রাবে রক্ত
- শুষ্ক এবং চুলকানি ত্বক
- উচ্চ্ রক্তচাপ
প্রতিরোধে করণীয়
যে কোনো ব্যক্তির উচিত চল্লিশ বছরের পরে একবার হলেও পরীক্ষা করা। বছরে দুই একবার ডায়াবেটিস রোগীদের পরীক্ষা করলে কিডনি রোগ ধরা পড়ে এবং আগামী দুই এক বছরে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা সেটিও বুঝা যায়। ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ১৫ থেকে ২০ বছর পর কিডনি রোগ হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে সাত থেকে ১০ বছর পরে হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মানুষের কিডনি ফেইলিউর হয়। রোগীরা খুব দ্রুত চিকিৎসা নিলে ৯০-৯৫ ভাগ রোগী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। ডায়রিয়া ও বমি হলে একবারে কিছু না করতে পারলে যে পানি শূন্যতা হলো সেটি রিপ্লেস করে নেওয়া।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা যেমন: আপনি একটি স্যালাইন খেতে পারেন অথবা স্যালাইন শরীরে দিতে পারেন। এ ছাড়া আরো যেসব করণীয় রয়েছে-
১. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২. পরীক্ষা করতে হবে।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ এবং এন্টিবায়েটিক খাওয়া যাবে না।
৪. অল্প থাকতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. নেফ্রাইটিস থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
৬. পাথর যাতে ব্লক করতে না পারে এজন্য চিকিৎসা নিতে হবে।
৭. প্রোস্টেট ব্লক থাকলে সেটি দূর করতে হবে।
৮. ডায়রিয়া ও বমি হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
৯. প্রস্রাব কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। এতে ৯০-৯৫ ভাগ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। তবে এক দুই সপ্তাহ চলে গেলে আর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না।
১০. প্রস্রাবকালীন জটিলতা পরিহার করতে হবে। গ্রাম্য দায়ী, অদক্ষদের দিয়ে সন্তান প্রস্রাব করানো যাবে না।
১১. প্রস্রাবের ইনফেকশন যখন রক্তে ছড়ায় তখন এটি কিডনিকে খারাপ করে দেয়। এজন্য ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
কিডনি সমস্যার চিকিৎসা
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। এ রোগের ঝুঁকি এড়াতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম ও সক্রিয় থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধসেবন না করা। স্থ‚লতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তদের নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা। নীরবে কারও কিডনি বিকল হতে থাকলেও অনেক সময় তা বোঝা যায় না; যখন রোগী তা বুঝতে পারেন, ততক্ষণে রোগটি জটিল পর্যায়ে চলে যায়। কাজেই সুস্থ মানুষকেও কিডনি ভালো রাখার উপায় জানতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যে ভেজালের কারণে কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড এসব অঙ্গের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। কাজেই ভেজাল প্রতিরোধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ভোক্তাদের সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ।
শেষ মন্তব্য
আসসালামু আলাইকুম আমাদের কিডনির সমস্যার কারণ , লক্ষন , প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পকিত পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটা আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন.। তারাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে ও উপকৃত হতে পারে। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন nafizit.com এ ওয়েবসাইটে এখানে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল লেখা আছে যা পড়ে আপনার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন।এবং আপনাদের জ্ঞান-বিধিতে সাহায্য করবে। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন এ থেকে আমরা সেই ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url