মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগী কথাটা তুললে প্রথমেই যে দৃশ্যটি মাথায় ভাসে তা হলো রাস্তাঘাটে অথবা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের এলোপাথাড়ি চলাফেরা, চিৎকার-চেঁচামেচি, ছোটাছুটি ইত্যাদির মতো অস্বাভাবিক কাজকর্ম।মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কিন্তু শুধু কি এরাই মানসিক রোগী? না, এদের বাইরেও অসংখ্য মানসিক রোগী আমাদের চারপাশে রয়েছে, অথচ আমরা বুঝতে পারছি না।মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ভূমিকা
বর্তমানে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাওয়ার এক অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। গ্লোবালাইজেশনের প্রভাবে আমরা সবকিছু ঘরের মধ্যেই পেয়ে যায়। যার ফলে, মানুষ মানুষের সংস্পর্শে খুব কম আসছে। পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। মনুষেরা একাকিত্বে ভুগছে। একারণে, মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা প্রসঙ্গে। এই টপিকটি বর্তমানে জানা খুবই জরুরি, কারণ এই সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আসুন তার আগে জেনে নেই মানসিক রোগ কি , কেন হয় , এই রোগ বংশগত কিনা বিস্তারিত -মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগ কি
মানসিক রোগ সাধারণত একজন ব্যক্তির আচরণ, মতানৈক্য, অনুভূতি বা মতানৈক্যের সমন্বয় দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়। এটি মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চল বা ফাংশনগুলির সাথে যুক্ত হতে পারে, প্রায়ই একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে তার সংযুক্তি থাকে । মানসিক ব্যাধি মানসিক স্বাস্থ্যের একটি দিক।
মানসিক রোগ কেন হয়
বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, জিন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার বিপর্যয় ঘটলে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। অন্যভাষায়, মানসিক রোগের জিনতত্ত্ব ও সম্ভাব্য ফলাফল সেই ব্যক্তির জৈবিক ও পারিপার্শিক পরিকাঠামোর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগ কি বংশগত
মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি জনিত কারণগুলির সাথে জিনেটিক উত্তরাধিকার অন্তর্ভুক্ত, যেমন বাবা-মায়ের বিষণ্ণতা বা উচ্চ স্নায়ুগত সমস্যা বা "মানসিক অস্থিরতার" কথা উল্লেখ করা যেতে পারে । বিষণ্ণতা জনিত প্যারেন্টিং ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পিতামাতার অসম চিকিৎসা এবং উচ্চ মাত্রায় গাঁজা ব্যবহারের সাথে সম্পৃক্ততা ।মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগের কারণ
বিভিন্ন সময়ে মানসিক রোগের কারণ সম্বন্ধে বিভিন্ন মত সামনে আনা হচ্ছে। এই সমগ্র কারণকে মূলতঃ প্রকৃতি ও প্রতিপালন সম্বন্ধীয় বিবাদ বলে আলোচনা করতে পারি। 'প্রকৃতি' মতবাদ অনুসারে মানসিক রোগ প্রাকৃতিক ঘটনার ফলে হয়। যেমন বংশগতির ফলে, কোনো জীবাণুর আক্রমণে, বা পরিবেশের অসমতার ফলে। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগের লক্ষন
মানসিক রোগের লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হল ঃ
- হঠাৎ হঠাৎ করে বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা
- অনেকদিন ধরে নিজেকে সবার কাছ থেকে সরিয়ে গুটিয়ে রাখা
- টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মন খারাপ থাকা
- অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া
- সবার সাথে ঝগড়া করা
- গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া
- অন্যদের অকারণে সন্দেহ করতে শুরু করা
- গোসল বা দাঁত মাজার মতো নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে নিজের প্রতি যত্ন না নেয়া
- যেসব কাজে আনন্দ পাওয়া সেসব কাজে নিরানন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া
- সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া
- নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে দায়ী মনে হওয়া সবকিছুতে
- সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া এবং খুব তীব্র হলে আত্মহত্যার চিন্তা পরিকল্পনা ও চেষ্টা করে
- অতিরিক্ত শুচিবায়ুগ্রস্থ হয়ে ওঠা
- ঘুম অস্বাভাবিক কম বা বাড়তে পারে
- খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া
- বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা । মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগ প্রতিরোধের উপায়
শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে। এটি মানুষের জৈবিক গঠন, মানসিক গঠন ও সামগ্রিক মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।
অন্যান্য রোগের মতো মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বেশ কতগুলো কার্যকরী উপায় আছে। সেগুলো হলোঃ
১. পরিস্থিতি এড়িয়ে না যাওয়াঃ আমাদের জীবনে কখনো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর, কষ্টদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা সেটাকে এড়িয়ে যেতে চাই এবং সেখান থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
এধরনের পরিস্থি এড়িয়ে না গিয়ে বরং সেটাকে মোকাবিলা করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আগামী দিনগুলো অতিবাহিত করা উচিৎ। এতে করে আমরা নিজেদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মতৃপ্তি পাবো।
২. অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে না ভেবে বর্তমানে মনোযোগ দেওয়াঃ আমরা, মানুষেরা স্বভাবতই অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকি। অতীতের নানা রকম পাওয়া, না-পাওয়ার হিসাব আমাদেরকে আফসোস করায়। এতে নানারকম দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
আবার ভবিষ্যতের নানাবিধ পরিকল্পনা আমাদেরকে বিচলিত করে তোলে। বর্তমান কাজে মননিবেশ করতে পারি না। এতে করে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
৩. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবঃ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই দরকারী। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদও দূর হবে। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
৪. মানুষকে সঙ্গ দেওয়াঃ একাকিত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করুন সবসময় ভালো মানুষদের সাথে থাকতে। সকলের সাথে হাসিখুশি আচরণ করলে এটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দিবে এবং আপনি বিচলিত হবেন না বরং প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
মানসিক রোগের চিকিৎসা
মানসিক রোগ শারীরিক ও সামাজিক নানা কারণেই হতে পারে। এর চিকিৎসাও হতে হয় বায়ো-সাইকোস্যোসাল মডেল অনুযায়ী। অর্থাৎ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল লাভ করা যায়। তবে কিছু রোগে ওষুধের ভূমিকা মুখ্য আবার কিছু রোগে সাইকোথেরাপি অত্যাবশ্যকীয়। তবে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সাইকিয়াট্রিস্ট বা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
এ ছাড়া সমাজে ভালোভাবে পুনর্বাসনের জন্য স্যোসাল ওয়ার্কারের সহযোগিতার প্রয়োজন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব বড় মেডিকেল কলেজে মনোরোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকার মধ্যে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল (মগবাজার), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (কলা ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও দর্পনসহ (গুলশান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইকোথেরাপি নেওয়া যায়। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে প্যাসিল্ক (পদ্মা আবাসিক, ভদ্রা) এ সাইকোথেরাপি পাওয়া যায়। মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
শেষ মন্তব্য
আসসালামু আলাইকুম আমাদের মানসিক রোগের কারণ , লক্ষণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পকিত পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটা আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন.। তারাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে ও উপকৃত হতে পারে। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন nafizit.com এ ওয়েবসাইটে এখানে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল লেখা আছে যা পড়ে আপনার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন।এবং আপনাদের জ্ঞান-বিধিতে সাহায্য করবে। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন এ থেকে আমরা সেই ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url