বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ -
ঐতিহাসিক নিদের্শন ও অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল ও সবুজ বেষ্টনী ঘেরা বাংলার ‘ভেনিস’ বা বরিশাল জেলা । বাংলার অসখ্য কৃতি সন্তানের জন্মভূমি এ বরিশাল । সৌন্দর্যে ভরপুর আর জালের মত ছড়িয়ে আছে অসখ্য নদী-নালা । এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমরা সেখানে কিভাবে যাব কোথায় থাকবো ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে কত সময় লাগে, যাতায়াতের ব্যবস্তা ও সেখানে যেতে খরচ কেমন হবে এ সম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের প্রতিবেদনে ।
ভূমিকা
বাংলার ভেনিস খ্যাত বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, দুর্গাসাগর দিঘী, গুঠিয়া মসজিদ, ভাসমান পেয়ারা বাজার, সাতলা শাপলা গ্রাম, বিবির পুকুর, ব্রজমোহন কলেজ, জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি, অক্সফোর্ড মিশন গীর্জা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান(বেলস পার্ক), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শ্বেতপদ্ম পুকুর । এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হল - বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রাজচন্দ্র রায় নির্মাণ করেন। জমিদার বংশের লোকেরা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তারা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য "রাজচন্দ্র কলেজ" ও "পুষ্পরানী বিদ্যালয়" নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এখানে তাদের কোনো উত্তরসূরি নেই। এখানে শেষ জমিদার ছিলেন দেবেন রায় চৌধুরী। রাজচন্দ্রের পুত্র পিয়ারিলাল রায় একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং বক্সার পরেশলাল রায়। তবে এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রূপচন্দ্র রায়।রায় চৌধুরী ভারতের কলকাতায় স্ব-পরিবারে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি তার মেয়ে মন্দিরা রায় চৌধুরীকে বরিশালের কাশিপুরের মুখার্জী বাড়িতে। তিনি এখনো এখানে বসবাস করতেছেন।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায় ও খরচ
বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে শ্মশান মোড়ে এসে সেখান থেকে লাখুটিয়া বাবুরহাটে যাওয়ার অটোরিক্সা, টেম্পোতে চড়ে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যেতে ১৫ টাকা ভাড়া লাগবে। অথবা রিজার্ভ সিএনজি/অটোরিক্সায় যেতে পারবেন লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
দুর্গাসাগর দিঘী
দক্ষিণে বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি বৃহৎ দিঘী। বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে স্বরূপকাঠি - বরিশাল সড়কে মাধবপাশায় এর অবস্থান। শুধু জলাভূমির আকার ২৭ একর। পার্শবর্তী পাড় ও জমি সহ মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন এই বিশাল জলাধারটি খনন করেন। তার স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে এর নাম করন করা হয় দুর্গাসাগর। ১৯৭৪ সালে তৎকালিন সরকারের উদ্যোগে দিঘীটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। বর্তমানে “দুর্গাসাগর দিঘীর উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারন্য” নামে একটি প্রকল্পের অধিনে বরিশাল জেলা প্রশাসন দিঘীটির তত্ত্বাবধান করছে।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
দুর্গাসাগর দিঘী যাওয়ার উপায় ও খরচ
বরিশাল থেকে চাখার যাওয়ার বাসে চড়লে দূর্গাসাগর দীঘির একদম সামনে নামতে পারবেন। এছাড়া লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারী চালিত লেগুনা দুর্গাসাগর দিঘীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। চাইলে সিএনজি কিংবা অটোরিক্সা রিজার্ভ করে ঘুরে আসতে পারবেন দুর্গাসাগর থেকে।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
গুঠিয়া মসজিদ
বরিশাল বিভাগে উজিরপুর থানার গুটিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে ১৪ একর জমির উপর বিশাল এই মসজিদটি গড়ে তোলা হয়েছে। গুটিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি পেলেও এর নাম বাইতুল আমান। ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর গুঠিয়া ইউনিয়নের এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ এবং ঈদগাহ্ কমপ্লেক্সের নির্মাণ শুরু করেন। ২০০৬ সালে গুটিয়া মসজিদ ও ঈদগাহ্ কমপ্লেক্সের নির্মাণ শেষ হয় ।এই মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, ২০ হাজার অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, এতিমখানা, একটি ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিংব্যবস্থা, লেক-পুকুরসহ বিভিন্নপ্ রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশ পথের ডানে বড় পুকুর।পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ, এক সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লী নামাজ পড়তে পারে। মসজিদ লাগোয়া মিনারটির উচ্চতা ১৯৩ফুট । ঈদগার প্রবেশ পথের দুই ধারে দুটি ফোয়ারা আছে। এই মসজিদের নির্মাণ কাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মান শ্রমিক কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায় ।পরে গুঠিয়ার নামেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
গুঠিয়া মসজিদ যাওয়ার উপায় ও খরচ
রিশাল হতে স্বরুপকাঠি যাবার যে কোনো বাসে উঠলেই গুঠিয়া মসজিদের সামনে নামতে পারবেন। এছাড়া বরিশাল সদরের নতুল্লাবাদ এলাকা থেকে মাহেন্দ্র গাড়িতে প্রতিজন ৩০ টাকা ভাড়ায় একেবারে মসজিদের সামনে পৌছে যেতে পারবেন। অথবা বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানারীপাড়ার উদ্দেশে ১৫ মিনিট পর পর বাস ছাড়ে।
ভাসমান পেয়ারা বাজার
ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market)। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে ভিমরুলির এই ভাসমান পেয়ারা বাজার।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
ভাসমান পেয়ারা বাজার যাওয়ার উপায় ও খরচ
বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে অটো বা রিক্সায় চৌরাস্তা এসে বাসে করে স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া লাগবে। স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে সন্ধ্যা নদী দিয়ে ঢুকে আটঘর, কুড়িয়ানা, ভীমরুলী বাজার ঘুরতে পারবেন। দরদাম করে নিলে ট্রলারভেদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
সাতলা শাপলা গ্রাম
বরিশাল সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে এ তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় এখানে লাল, সাদা আর বেগুনি এই তিন ধরণের শাপলা জন্মে। তবে লাল শাপলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
সাতলা শাপলা গ্রাম যাওয়ার উপায়
কিংবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিসে ২ ঘন্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়েও ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম সাতলা হতে।বরিশালের দর্শনীয় স্থান সমূহ
শেষ মন্তব্য
আসসালামু আলাইকুম আমাদের পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটা আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন.। তারাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে ও উপকৃত হতে পারে। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন nafizit.com এ ওয়েবসাইটে এখানে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল লেখা আছে যা পড়ে আপনার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন।এবং আপনাদের জ্ঞান-বিধিতে সাহায্য করবে। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন এ থেকে আমরা সেই ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url