অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন



সারাবিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধি নীরব ঘাতকের মতো ধেয়ে আসছে এবং আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অসংক্রামক ব্যাধি এখন মানব জাতির বেঁচে থাকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত, যক্ষ্মা, হামের মতো বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি সহজেই চিকিৎসায় নিরাময় হচ্ছে এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

ভূমিকা

সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে আসছে। এখন অসংক্রামক ব্যাধির প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে অসংক্রামক ব্যাধিতে মানুষ অনেক বেশি হারে আক্রান্ত হচ্ছে।আজকে আমরা জানবো অসংক্রামক রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং সুস্থ জীবনযাপন করার উপায় -

অসংক্রামক রোগ কাকে বলে

একটি অসংক্রামক রোগ ( এনসিডি ) এমন একটি রোগ যা সরাসরি একজন থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয় না। এনসিডিগুলির মধ্যে রয়েছে পারকিনসন্স ডিজিজ , অটোইমিউন ডিজিজ , স্ট্রোক , হৃদরোগ , ক্যান্সার , ডায়াবেটিস , দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ , অস্টিওআর্থারাইটিস , অস্টিওপরোসিস , আলঝেইমার রোগ , ছানি এবং অন্যান্য। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

অসংক্রামক রোগ কিভাবে ছড়ায়

এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা জিনগত (জেনেটিক) ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে যোগ হয় পরিবেশগত উপাদান (Environmental factors) যেমন পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর ও বাজে খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই দুয়ে মিলে বর্তমান সময়ে অনেক কম বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

অসংক্রামক রোগের কারণ কি?

এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা জিনগত (জেনেটিক) ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে যোগ হয় পরিবেশগত উপাদান (Environmental factors) যেমন পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর ও বাজে খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ইত্যাদি। এই দুয়ে মিলে বর্তমান সময়ে অনেক কম বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এ ধরনের রোগে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের উপায় 

এসব ব্যাধির চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল এবং অনিরাময়যোগ্য হয়ে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিকার-প্রতিরোধ করার বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

* আমাদের সামাজিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনা দরকার। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কম চর্বি ও কম কোলেস্টোরেলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম, চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন শরবত, গ্লুকোজ, পায়েস ইত্যাদি পরিহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

* লবণ নিয়ন্ত্রণ: তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

* কায়িক শ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটাচলা, হাটে বাজারে কোথাও গেলে অল্প দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফট ব্যবহার না করা। সম্ভব হলে সাঁতার বা জগিং করা, ব্যয়ামাগারে গিয়ে ব্যায়াম করা।

* অতিরিক্ত মোবাইল, ইউটিউব, ফেসবুক, টেলিভিশন আর কম্পিউটার ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে হবে।

* যারা বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত তারাও নিয়মিত হাঁটাচলা করতে পারেন। এর সঙ্গে বাগান করা এবং পরিচর্যা করতে পারেন।

* নগরবাসীর জন্য ব্যায়াম ও হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা।

* বাড়তি ওজন কমাতে হবে। এর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

* ধূমপান, মদ্যপান, মাদকদ্রব্য, তামাকপাতা ও জর্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

* বায়ুদূষণের কারণগুলো চিহ্নিত করে এগুলো প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিতে হবে। সবুজায়ন বৃদ্ধির জন্য প্রচুর গাছপালা লাগাতে হবে।

* মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে। নিয়মিত বিশ্রাম, সময়মতো ঘুমানো, নিজের শখের কাজ করা, নিজ ধর্মের চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে।

* শিক্ষা ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। এসব রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা, পাঠ্যপুস্তকে এ সম্পর্কে অন্তর্ভুক্তি করা, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

* নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়মিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি পরীক্ষা করা জরুরি। এমনকি বয়স ৪০ পার হলে প্রতি বছর মেডিকেল চেকআপ করা উচিত। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ এসব ব্যাধি আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্যের সমস্যা, যেগুলো কখনো নির্মূল করা যাবে না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশি যত্নবান হতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এসব রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যেহেতু একবার আক্রান্ত হলে এ ধরনের ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না, তাই সচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধের বিকল্প নেই। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন


অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন উপায়

তামাক ব্যবহার, ক্ষতিকর অ্যালকোহল ব্যবহার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মতো সাধারণ ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করে অনেক এনসিডি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থাকে এনসিডি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যার মধ্যে আঘাত এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি রয়েছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির কারণ কি কি?

বেশিরভাগ অসংক্রামক রোগ চারটি বিশেষ আচরণের ফল ( তামাক ব্যবহার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং অ্যালকোহলের ক্ষতিকর ব্যবহার ) যা চারটি মূল বিপাকীয়/শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করে (রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন/স্থূলতা, রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি এবং বৃদ্ধি) কোলেস্টেরল)। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

অসংক্রামক রোগের চারটি প্রধান প্রকার কি কি?


অসংক্রামক রোগ (NCDs), যেমন হৃদরোগ, ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং ডায়াবেটিস , বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং একটি উদীয়মান বিশ্ব স্বাস্থ্য হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন

শেষ মন্তব্য

আসসালামু আলাইকুম আমাদের  অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপন সম্পকিত পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এটা আপনার বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন.। তারাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে ও উপকৃত হতে পারে। এবং বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে ভিজিট করুন nafizit.com এ ওয়েবসাইটে এখানে বিভিন্ন রকমের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল লেখা আছে যা পড়ে আপনার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবেন।এবং আপনাদের জ্ঞান-বিধিতে সাহায্য করবে। এবং আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি জানাবেন এ থেকে আমরা সেই ভুলটি সংশোধনের চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url