ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর কি: ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ । এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমনের তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে ।ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ সমূহ:
অন্যান্য অসুস্থতার সঙ্গে অনেক সময় ডেঙ্গুর উপসর্গ গুলো মিলে যায়। তাই আমরা অনেক সময় এই বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলি। আসুন জেনে নেওয়া যাক সাধারণত ডেঙ্গুর উপসর্গ গুলো কি কি- ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
১। জ্বরের সঙ্গে চোখে ব্যথা (সাধারণত চোখের পিছনে হয়)।
২। জ্বরের সঙ্গে পেশিতে ব্যথা।
৩। জ্বরের সঙ্গে হাড়ে ব্যথা।
৪। জ্বরের সঙ্গে বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
৫। জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা ।
৬। জ্বরের সঙ্গে ফুসকুড়ি।
৭। আবার অনেক সময় শুধু জ্বর হবে।
ডেঙ্গুর এই উপসর্গ গুলো সাধারণত দুই থেকে সাত দিন থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের টেস্ট কি কি:
সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে ডেঙ্গু জ্বরের জন্য টেস্ট করাতে হয়। প্রথমত জ্বর আসলে ডেঙ্গুর জন্য (NS1) টেস্ট করতে হয়। জ্বর আসার দিন থেকেই এই টেস্ট করতে পারেন। এক্ষেত্রে ফলাফলও ঠিকঠাক মেলে। ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা খুব সহজেই এই টেস্ট করা যায়। সব জায়গাতেই এই টেস্ট করা যায় এবং এমন কি এই টেস্টের খরচও অনেক কম। এছাড়া একদম নিশ্চিত করে ডেঙ্গু সম্পর্কে জানতে চাইলে করতে পারেন IGM Dengue Antibody টেস্ট। এই টেস্টের মূল সমস্যা হলো, জ্বর আসার পাঁচ দিন পর টেস্ট করলে জানা যায় রোগ সম্পর্কে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা:
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা খুব কঠিন নয়। এই রোগের তেমন কোন ওষুধও নেই। সেক্ষেত্রে মানুষকে বেশি করে পানি পান করতে হয়। এর মাধ্যমে শরীর হাইড্রেড থাকে। এছাড়া করতে হয় কিছু সিম্পটোমেটিক চিকিৎসা, যেমন জ্বর আসলে তার ওষুধ দিতে হয়।ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এছাড়া তেমন কোনো ওষুধ দরকার নেই। তবে শরীর খুব খারাপ লাগলে, প্লেটলেট কমলে, রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে এনে রোগীকে চিকিৎসা করতে হবে। মনে রাখবেন ডেঙ্গু জ্বরের জন্য কখনোই এন্টিবায়োটিক বা ব্যথার ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। এইগুলো খেলে শরীরের আরো অনেক সমস্যা বাড়বে। তাই ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খাবেন, কি খাবেন না:
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনাকে খাবারের প্রতিও বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা করার জন্য কয়েকটি খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। আবার সেই সঙ্গে কয়েকটি খাবার এড়িয়ে যেতেও বলেছেন। আসুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন-ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
জ্বর হলে আপনারা বেশি বেশি কমলা খেতে পারেন। কারণ কম রাতে রয়েছে পশুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুইটি উপাদান আপনাকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট কাজে দিবে।
এছাড়া আপনি খেতে পারেন ডালিম। ডালমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। ডালিম খেলে প্লেটলেট এর সংখ্যা বাড়ে এবং শরীরের ক্লান্তি এবং অবসাদ দূর হয়।ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডাবের পানি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। ডাবের পানি শরীরের ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। কেননা ডাবের হয়েছে ইলেকট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
এছাড়া পেঁপে পাতার জুস করেও খেতে পারেন। কেননা এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্লেটলেট।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কাজে আসতে পারে হলুদ ও। এজন্য আপনাকে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবে।
আপনি মেথি খেতে পারেন। মিথি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত জ্বর কমিয়ে আনে এবং ঘুমিয়ে যেতে সহায়তা করে। যার ফলে আমরা অনেকটা সুস্থতা বোধ করি।
এছাড়া আমরা সবজির মধ্যে ব্রুকলি ,পালংশাক, কিউই ফল খেতে পারি।
ডেঙ্গু জ্বর আসলে অবশ্যই আমরা তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার কখনোই খাব না। এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে যার ফলে আমরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারি।
এর সাথে আমাদেরকে মসলাযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা মসলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে পাকস্থলীর স্বাভাবিক কার্যক্রিয়া নষ্ট হবে এবং আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।
এছাড়া আমরা কোন প্রকার ক্যাফিন যুক্ত পানিও পান করবো না। কেননা ক্যাফিন যুক্ত খাবার হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে সেই সঙ্গে ক্লান্তি নিয়ে আসতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর সারতে কতদিন লাগে?
ডেঙ্গুর ভাইরাস ভাই মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। জ্বরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হতে পারে। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। তাই আমরা সবাই চাই এই রোগ থেকে অতি দ্রুত মুক্তি পেতে। সাধারণত এটি একটি অনেক কষ্টদায়ক রোগ। এই রোগটি সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকিও থাকতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ:
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত একটি মশা বাহিত রোগ। তাই আমরা যদি মশার কামড় থেকে দূরে থাকতে পারি তাহলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এ রোগ থেকে আমরা বাঁচার জন্য যে সকল কাজ করতে পারি-
১। অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকার চেষ্টা করা।
২। বাড়িতে মশারি অথবা মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করা।
৩। বাইরে যাওয়ার সময় ফুলহাতা জামা ব্যবহার করা।
৪। পরিস্থিতি অনুযায়ী মোজা ব্যবহার করা।
৫। জানালায় নেট লাগানো অথবা দরজা জানালা বন্ধ করে রাখা।
৬। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন থাকলে তা ব্যবহার করা।
৭। বাড়ির আশেপাশে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৮। বাড়ির আশেপাশে কোন ভাঙ্গা প্লাস্টিকের বোতল অথবা যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে এমন জায়গা খেয়াল রাখা যেন সেখানে পানি জমে থাকতে না পারে।
৯। ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকলে ডাক্তার দেখানো।
১০। দিনের বেলা ও সন্ধ্যার সময় ডেঙ্গু। তাই এই সময় অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা।
যদি আমরা এই সকল নিয়ম মেনে চলতে পারি, তাহলে আমরা প্রথম থেকেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারব।ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url